গুচ্ছ গুচ্ছ আরবি শব্দাক্ষরে বিন্যস্ত একটি বাক্য হলো ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সা. আরবি ভাষাভাষী ছিলেন বলে মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষাও আরবি। কিন্তু তিনি অন্যান্য নবী-রাসুলের ন্যায় নির্দিষ্ট সময়, যুগ, শতাব্দী, ভূখণ্ড ও অঞ্চলের মানুষের জন্য আসেননি; তিনি সময়, কাল, ভূখণ্ড ও অঞ্চলেরর সীমা অতিক্রম করে এসেছেন সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে আল্লাহর প্রতিনিধি হয়ে। বিশ্বমানবতার ইহলৌকিক-পারলৌকিক মুক্তির উদ্দেশ্যে। এসেছেন চির প্রবীণ, চির নবীন, শাশ্বত, চিরন্তন, সর্বকালের ও সর্বযুগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ইসলাম ধর্ম নিয়ে। কালক্রমে রাত দিনের বিবর্তনে, সময়ের ঘূর্ণনে সে ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছে যুগ থেকে যুগান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে, বিশ্বের ভূখণ্ডে ভূখণ্ডে।
আরব ভূখণ্ড থেকে হাজারো মাইল দূরে অবস্থিত লাল সবুজের পতাকা খচিত বাংলাদেশ। এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ইসলাম। ঐতিহাসিকভাবেই এ দেশের মানুষ ধর্মভীরু, ধর্মের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তাই ঐতিহাসিক কারণেই বাঙালি মুসলমানদের কাজ-কর্মে, আচার-আচরণে ‘বিসমিল্লাহ’, ‘ইনশাআল্লাহ’, ‘মাশাআল্লাহ’ ও ‘আস্সালামু আলাইকুম’সহ বহু আরবি শব্দের প্রচলন ঘটেছে। ব্যক্তির ধর্ম, আদর্শ ও চিন্তা-চেতনা, তার কর্ম, আচরণ ও সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলবে- এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এসব বাক্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরবি ব্যাকরণগত বিধিবদ্ধতার পাশাপাশি রয়েছে ধর্মীয় ব্যবহারবিধি ও সীমাবদ্ধতা। অনেকের না জানার কারণে সেসব ব্যবহারবিধি প্রায়ই লঙ্ঘিত হচ্ছে। এতে কেবল উদ্দেশ্যেরই বিচ্যুতি ঘটছে না; বড় ধরনের পাপ হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
আমাদের সমাজে যেসব ক্ষেত্রে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ লেখা মাসনূন বা মুস্তাহাব সেসব ক্ষেত্রে অনেকেই ‘৭৮৬’ লিখে থাকে। আবজাদের হিসেবে এটা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’-এর অক্ষরগুলোর সংখ্যামানের সমষ্টি। কারো কারো ধারণা আছে যে, এই সংখ্যাগুলো লিখলে বা উচ্চারণ করলে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখার বা বলার কাজ হয়ে যায়। এটা একটা ভুল ধারণা। মুখে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পাঠ করে যদি এই অংকগুলো লেখা হয় তাহলে সেটা ‘বিসমিল্লাহ’র চিহ্ন গণ্য করা যেতে পারে। কিন্তু সরাসরি এই অংকটাকেই বিসমিল্লাহর বিকল্প মনে করা সম্পূর্ণ ভুল।
বিশেষভাবে বলাবাহুল্য যে, একটি ‘সুন্নতে মুতাওয়ারাছা’ যা সর্বযুগের ওলামা-মাশায়েখ ও দ্বীনদার ব্যক্তিদের মধ্যে অনুসৃত ছিল তা বাদ দিয়ে শুধু আবজাদী অংক লেখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
-আপকি মাসায়েল আওর ইনকা হল-২/৫৭১, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-৩/৩৪০
Leave a Reply