নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (স্ত্রী মিলন করার মাধ্যমে) ‘তোমাদের লজ্জাস্থানের মধ্যে সদকা রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের কেউ চাহিদা পুরা করবে, আর এর জন্য সওয়াব হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বল! যদি সে হারাম জায়গায় চাহিদা পুরা করত, তার গুনাহ হতো না? তাই যখন সে এটাকে হালাল জায়গায় পুরা করবে, তখন সওয়াব হবে।’ -মুসলিম : ১০০৬। মানবজীবনের সব তাকাযা খুব সুন্দর শীলিতভাবে পূর্ণ করার কথা বলে ইসলাম। এতে জীবনের সব কিছুর জন্যই রয়েছে সুষ্ঠু নীতিমালা। ইসলামে যেভাবে বিয়ের মতো পবিত্র বিধান আছে, ঠিক তেমনি বিয়ের পর স্ত্রীর সঙ্গে চাহিদা পূরণেরও আদর্শ নিয়ম আছে। এগুলোও জানা দরকার। কারণ বিয়ে ও স্ত্রী মিলন লজ্জাস্থান হেফাজতের সঙ্গে সঙ্গে বংশ বৃদ্ধিরও মাধ্যম।
ইসলামী রীতি-নীতি অনুসারে জৈবিক চাহিদা পুরা করার জন্য রয়েছে সওয়াবের ঘোষণা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (স্ত্রী মিলন করার মাধ্যমে) ‘তোমাদের লজ্জাস্থানের মধ্যে সদকা রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের কেউ চাহিদা পুরা করবে, আর এর জন্য সওয়াব হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বল! যদি সে হারাম জায়গায় চাহিদা পুরা করত, তার গুনাহ হতো না? তাই যখন সে এটাকে হালাল জায়গায় পুরা করবে, তখন সওয়াব হবে।’ -মুসলিম : ১০০৬
স্বামীকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর জন্য একটু কষ্ট হলেও তার ডাকে সাড়া দেওয়া উচিত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো স্ত্রী আল্লাহর হক আদায় করতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার ওপর অর্পিত স্বামীর হক আদায় করে। স্বামী যদি তাকে আহ্বান করে আর সে হাওদার কাষ্ঠেও থাকে, তারপরও তাকে সুযোগ দিতে হবে।’ -আল-মুজামুল কাবির : ৫০৮৪
উল্লেখ্য, স্বামীর উচিত স্ত্রীর কাছে সুন্দরভাবে আসা। জোরপূর্বক আসা ঠিক হবে না। এজন্য আগে এ বিষয়ে তাকে ভালোমতো উৎসাহিত করা। তাহলে বিষয়টা সন্তুষ্টচিত্তে হবে এবং জোর-জবরদস্তির সুযোগ তৈরি হবে না। কারণ আদর্শ দাম্পত্ত জীবন গড়তে স্বামী-স্ত্রীর দুজনেরই সমান অংশগ্রহণ জরুরি। কারণ এতে উভয়ের ইচ্ছা যতটুকু থাকবে, এতটুকুই প্রশান্তির কারণ হবে। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন উভয়ের মধ্যে মহব্বত-ভালোবাসা, দয়া-মমতা থাকবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারষ্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলি রয়েছে।’ -সুরা রোম : ২১
তাই স্ত্রীর অসুবিধা থাকলে সহবাস ছাড়া অন্যভাবেও তার থেকে উপকার গ্রহণের সুযোগ যেহেতু রয়েছে, তাই জোর না করাই ভালো। নবী কারীম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন পশুদের ন্যায় স্ত্রীর উপর ঝাপিয়ে না পড়ে। উভয়ের মাঝে রয়েছে মধ্যপন্থা। জিজ্ঞাসা করা হলো, মধ্যপন্থাটি কী? তিনি বললেন, চুম্বন করা ও (আমোদপূর্ণ) কথা বলা।’
তবে স্ত্রীর জন্য ক্ষতির কারণ না হলে কিংবা ফরজ ছুটে না গেলে স্বামীর যে কোনো সময় তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার অধিকার রয়েছে। অসুস্থতা, ঋতুস্রাব, ওয়াজিব রোজা কিংবা মিলন করলে ক্ষতি হবে এমন কোনো ধরনের অবস্থা থাকলে ভিন্ন কথা। কিন্তু সহবাসের প্রতি শুধুমাত্র অনাগ্রহ ওজর বলে ধর্তব্য হবে না। তখন আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও তার সঙ্গে সহবাস অবৈধ হবে না। তবে স্ত্রীর অনাগ্রহের কারণটিও কিন্তু ভালোমতো দেখতে হবে।
শরিয়তসম্মত ওজর ছাড়া স্বামীকে বাধা প্রদান করা হলে স্ত্রী অবাধ্য বলে গণ্য হবে। এমন নারীর প্রতি কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে, তখন সে যদি অস্বীকার করে আর স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত যাপন করে তাহলে সকাল পর্যন্ত ফেরেশতারা তার ওপর অভিসম্পাত করে।’ -আবু দাউদ : ২১৪১
এমন অবাধ্য স্ত্রী গর্ভবতী না হলে তার খরচ-ভরণ-পোষণ দিতে হবে না।
তবে বিষয়টাকে অবহেলার চোখে না দেখে তাকে বোঝাতে হবে। আল্লাহর শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করতে হবে। প্রয়োজনে বিছানা ত্যাগ করতে হবে এবং মৃদু প্রহারও করা যেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর।’-সুরা নিসা : ৩৪
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে ইসলামের সার্বজনীন আইন-কানুন মেনে সুন্দর জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।