আমাদের সমাজ! আমাদের অবস্থা! বড়ই আশ্চর্য লাগে যখন ভিত্তিহীন কিছু শুনি। আহ! কবে এ জাতি সঠিক পথে আসবে? লোকমুখে প্রসিদ্ধ- জিবরীল আ. বলেছেন, পৃথিবীতে বৃষ্টি হলে কত ফোটা পানি পড়ে, আমি তা গুনতে পারি, কিন্তু যৌবনের ইবাদতের সওয়াব গুনে শেষ করতে পারি না।
যৌবনে ইবাদতের ফযীলত হিসেবে অনেক লোক উপরোক্ত কথাটিকে হাদীস হিসেবে বলে থাকেন। কিন্তু উপরোক্ত কথাটি হাদীস নয়; হাদীসের নির্ভরযোগ্য কোনো কিতাবে তা খুঁজে পাওয়া যায় না।
যৌবনের ইবাদত আল্লাহ তাআলার কাছে অনেক প্রিয়। আল্লাহ তাআলার দরবারে যুবক বয়সের ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা ও গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ যৌবনের টগবগে সময়ে একজন তরুণের মাঝে এক ধরনের কামনা, বাসনা, উত্তেজনা আবার চরম হতাশা কাজ করে। আর তাতে সে ইবাদত-বন্দেগি তথা আল্লাহর ভয় থেকে গাফেল হয়ে যায়।যারা বয়ঃসন্ধিক্ষণে যৌবনের উম্মাদনা থেকে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তারাই সফলকাম। এ কারণেই যৌবনে নিজেকে নির্মল, সৎ ও চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তুলতে কুরআন ও হাদীসে জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তিনি (মুসা আলাইহিস সালাম) যখন পূর্ণ যৌবনে পৌছিলেন, তখন তাকে প্রজ্ঞা ও বুৎপত্তি দান করলাম।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৪) আসহাবে কাহাফের ৭ ব্যক্তিও ছিল যুবক। যারা এক আল্লাহর ইবাদতে বিশ্বাসী ছিলেন। যাদেরকে শত্রুর হাত থেকে আল্লাহ তাআলা রক্ষা করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন যুবকেরা পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করে তখন দোয়া করে- হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদেরকে (তোমার) নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করুন।’ (সুরা কাহাফ : আয়াত ১০)
এর ফযীলত সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ সাত ব্যক্তিকে তাঁর (আরশের) ছায়ায় স্থান দিবেন; যেদিন তাঁর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। …(তন্মধ্যে) ঐ যুবক, যার যৌবন অতিবাহিত হয় আল্লাহর ইবাদতে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৬০; সহীহ মুসলিম ১০৩১
যুবকদের উদ্দেশ্যে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নসিহত হলো- ‘একজন বৃদ্ধের ইবাদতের চেয়ে আল্লাহ বেশি খুশি হন যেসব তরুণ-তরুণী যৌবন বয়সে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকে।’
প্রিয়নবি আরো বলেন, ‘কেয়ামতের দিন ৫টি প্রশ্নের উত্তর দেয়া ব্যতীত মানুষকে এক কদম নড়তে দেয়া হবে না; তার মধ্যে একটি হলো- ‘সে তার যৌবনকাল কোন পথে ব্যয় করেছে।’
অন্য হাদীসে তিনি ৫টি অবস্থার পূর্বে ৫টি অবস্থাকে মর্যাদা দেয়ার কথা বলেছেন, তন্মধ্যে একটি হলো- ‘তোমরা বার্ধক্যের আগে যৌবনকে মর্যাদা দাও।’
এ ছাড়াও যৌবনের ইবাদত বিষয়ে আরও সহীহ হাদীস রয়েছে। আমরা সেগুলোই বলব; ভিত্তিহীন কোনো কথা বলব না।
Leave a Reply