দুআ ঈমানদারের সম্বল, সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় তা মুমিনের অবলম্বন। মুমিন যখন সুখী তখনও আল্লাহকে ভোলে না, যখন দুঃখী তখনও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না। সুখ ও শান্তি আল্লাহর তরফ থেকে আসে। মুক্তি ও বিপদ মোচনও তাঁর আদেশে হয়। তারই ফায়সালায় অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। অতএব দুআ সর্বাবস্থার আমল।
وَ اِنْ یَّمْسَسْكَ اللهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهٗۤ اِلَّا هُوَ، وَ اِنْ یُّرِدْكَ بِخَیْرٍ فَلَا رَآدَّ لِفَضْلِهٖ، یُصِیْبُ بِهٖ مَنْ یَّشَآءُ مِنْ عِبَادِهٖ، وَ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.
আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো অকল্যাণ দিয়ে আক্রান্ত করেন তাহলে তিনি ছাড়া তা দূর করার আর কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমার কোনো কল্যাণ চান তবে তাঁর দয়া প্রতিহত করারও কেউ নেই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। -সূরা ইউনুস (১০) : ১০৭
আল্লাহ-ভোলা মানুষের চিন্তায় সুখ-শান্তি, অশান্তির পরিধি খুবই সীমিত। শুধু পার্থিব জীবনের ক্ষুদ্র পরিসরেই তা সীমাবদ্ধ। পক্ষান্তরে প্রজ্ঞাবান মুমিনের কাছে এসব বিষয়ের পরিধি অনেক বিস্তৃত। মুমিনের কাছে যেমন শান্তির উপকরণই শান্তি নয় তেমনি শুধু পার্থিব শান্তি তার একমাত্র কাম্য নয়। মুমিনের কাছে শান্তি হচ্ছে, যা আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষের অন্তরে দান করেন আর যা আখিরাতে তাঁর ওফাদার বান্দাদের দান করবেন।
এ শান্তির আছে অনেক স্তর। মুমিন প্রত্যাশী সর্বোচ্চ শান্তির। তেমনি মুমিনের কাছে অশান্তির অনুষঙ্গ ও উপকরণগুলোই অশান্তি নয় এবং পার্থিব দুঃখ-কষ্টই বড় দুঃখ-কষ্ট নয়। আখিরাতের কষ্টই বড় কষ্ট, আখিরাতের ব্যর্থতাই চরম ব্যর্থতা। একারণে ‘শান্তি’প্রিয় মুমিনের দুআ ও প্রার্থনা জীবনব্যাপী।
সুখে-দুঃখে, শান্তি-অশান্তি সর্বাবস্থায়। তাছাড়া এ তো এক সহজ সত্য যে, সুখের সময় যে আল্লাহকে স্মরণ করে দুঃখের সময় আল্লাহ তাকে ভোলেন না। এজন্য, দুআ শুধু সংকট-কালের আমল নয়। সর্বাবস্থার আমল। সর্বোপরি দুআ হচ্ছে ইবাদত। আর আব্দের (বান্দার) জন্য ‘ইবাদত’ সব সময়ের কাজ। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছেন এভাবে-
إذا سألت فاسأل الله وإذا استعنت فاستعن بالله.
যখন তুমি কিছু প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহ্র কাছেই প্রার্থনা করবে; যখন সাহায্য চাইবে তখন আল্লাহ্র কাছেই সাহায্য চাইবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫১৬
কেবলই বিপদের সময় আল্লাহকে ডাকা মুমিনদের কোনো বিশেষত্ব নয়। তারা তো সুখে-দুঃখে উৎসবে-সংকটে সর্বাবস্থায়ই আল্লাহকে ডাকে। যে কোনো কাজ করার সময় তারা আল্লাহ্র কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে। সে কাজটি কঠিন মনে হলেও আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করে, এমনকি সহজ মনে হলেও আল্লাহকেই ডাকে। মুমিন বান্দার ফরিয়াদ তো এমন-
اللّهُمّ لاَ سَهْلَ إِلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلا، وَأَنْتَ تَجْعَلُ الْحَزنَ سَهْلاً إِذَا شِئْتَ.
হে আল্লাহ! আপনি যা কিছু সহজ করে দেন তা ছাড়া তো সহজ আর কিছুই নেই। আপনি যখন ইচ্ছা করেন তখন দুঃখ-কষ্টকেও সহজ করে দেন।
Leave a Reply