তাকওয়া বা খোদাভীতি সৎ গুণাবলির মধ্যে হচ্ছে অন্যতম। যার মধ্যে তাকওয়া থাকে সে পার্থিব জীবনের লোভে কোনো খারাপ কাজ করে না এবং পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও মঙ্গলের কাজে সব সময় নিজেকে নিয়োজিত রাখে।
তাকওয়া বা খোদাভীতির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে খোদাভীতি, পরহেযগারী, বিরত থাকা, আত্মশুদ্ধি। আর শরীয়াতের পরিভাষায়- আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে তাঁর বিধি-বিধান মেনে চলার নাম তাকওয়া। যে ব্যক্তির মধ্যে তাকওয়া থাকে তাকে মুত্তাকি বলা হয়।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক খোদাভীরু। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত।’ -হুজরাত ১০
সূরা হাশরে ইরশাদ হচ্ছে-‘হে ঈমানদার লোকেরা! আল্লাহকে ভয় কর এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন লক্ষ্য করে যে, সে আগামী দিনের জন্য কি সামগ্রীর ব্যবস্থা করে রেখেছে। আল্লাহকেই ভয় করতে থাক। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের সেসব আমল সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা কর।’ -হাশর ১৮
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর, তাকে যেরূপ ভয় করা উচিত। তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ -আল ইমরান ১০২
সূরা ফাতিরে মহান রব্ব ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল ইলম সম্পন্ন লোকেরাই তাঁকে ভয় করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহাশক্তিশালী ও ক্ষমাকারী।’ -ফাতির ২৮
এছাড়াও আরও অনেক আয়াতে তাকওয়া সম্পর্কে বলে হয়েছে। বাদ পড়েনি রাসূলের বাণীও। হযরত আতিয়া আস-সাদী রাযি. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তি পাপ কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা যেসব কাজে গুণাহ নেই তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত খোদাভীরু লোকদের শ্রেণীভুক্ত হতে পারে না। -তিরমিযি ও ইবনে মাজা
আম্মা জান হযরত আয়েশা রাযি. হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আয়েশা। ছোটখাট গুণাহর ব্যাপারেও সতর্ক হও। কেননা এ জন্যও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। -ইবনে মাজা
আরেক হাদীসে হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নির্ধারিত রিযিক পূর্ণমাত্রায় লাভ না করা পর্যন্ত কোন লোকই মারা যাবে না। সাবধান! আল্লাহকে ভয় কর এবং বৈধ পন্থায় আয় উপার্জনের চেষ্টা কর। রিযিকপ্রাপ্তিতে বিলম্ব যেন তোমাদেরকে অবৈধ পন্থা অবলম্বনে প্ররোচিত না করে। কেননা আল্লাহর কাছে যা কিছু রয়েছে তা কেবল আনুগত্যের মাধ্যমে লাভ করা যায়। -ইবনে মাজা
কুরআনুল কারীমের আয়াত ও বিভিন্ন হাদীস সমূহ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, তাকওয়া এমন একটি গুণ যা সমাজ জীবনে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করে, সমাজে ইতিবাচক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে এবং তাকওয়ার অভাবে মানব চরিত্র পাপকর্মে লিপ্ত হয়ে সামাজিক জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। যার নজির বর্তমান বিশ্বের সর্বত্র বিরাজমান। পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান সমস্যাসংকুল ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাকওয়ার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। মানুষের মধ্যে ব্যাপকভাবে যতদিন না তাকওয়া সৃষ্টি হবে, ততদিন মানব জাতির সামগ্রিক কল্যাণ ও মঙ্গল আশা করা যায় না। তাই বলা যায়, তাকওয়া হলো, মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত জীবনের মুক্তি ও নাজাতের মূল চাবিকাঠি।
Leave a Reply