আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বে কোন ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে বা তার মৃত্যু নিয়ে কোন সন্দেহ তৈরি হলে, অথবা দূর্ঘটনা কিংবা কোনো হত্যাকাণ্ড হলে মৃত্যুর সঠিক কারণটি জানার জন্য মৃতদেহের পোস্টমর্টেম করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে মৃতদেহ বিশ্লেষণ করে বোঝার চেষ্টা করা হয়, ঠিক কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে। আবার অনেক সময় বিনা প্রয়োজনেও তা করা হয়। এরকমও হয় স্বাভাবিকভাবে মৃত মানুষের লাশটি পোস্টমর্টেম করা হয় কাউকে ফাঁসানোর জন্য।
আজ আমরা জানবো লাশের পোস্টমর্টেম ইসলামে জায়েজ আছে কিনা। এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ জীবিতাবস্থায় যেমন সম্মানিত, মৃত্যুর পরও ঠিক তেমনি সম্মানিত। জীবিত মানুষকে কষ্ট দেওয়া যেমন অপরাধ ও গুনাহ, তেমনি মৃত্যুর পরও কাউকে কষ্ট দেওয়া অপরাধ ও গুনাহর কাজ। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন, কোনো মুমিন ব্যক্তিকে তাঁর মৃত্যুর পর কষ্ট দেওয়া তেমনই যেমন জীবিত অবস্থায় তাকে কষ্ট দেওয়া।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ১১৯৯০
উল্লেখিত হাদীস ও আছারের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার রাহ. বলেছেন, জীবিত ব্যক্তি যে সকল বস্ত্ত দ্বারা আরাম বোধ করে মৃত ব্যক্তি তা দ্বারা আরাম বোধ করে। ইবনুল মালাক রাহ. বলেছেন, মৃত ব্যক্তি কষ্টদায়ক বস্ত্ত দ্বারা কষ্ট পায়। (মিরকাতুল মাফাতীহ ৪/১৭০) তাই মৃত ব্যক্তিকে হিমাগারে রাখা মূলত তাকে কষ্ট দেওয়ারই নামান্তর। এসব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।
মনে রাখা উচিত যে, কোনো ব্যক্তি মারা গেলে শরীয়তের নির্দেশনা হল বিলম্ব না করে তাকে গোসল দিবে, কাফন পরাবে। অতপর জানাযা নামায পড়ে দ্রুত দাফন করে দিবে। একাধিক হাদীসে মৃত্যুর পর থেকে দাফন পর্যন্ত সকল কাজ দ্রুত আঞ্জাম দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং বিলম্ব করতে নিষেধ করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে এসেছে- তালহা ইবনে বারা রা. অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। অতপর বললেন, আমি তালহার মধ্যে মৃত্যুর আলামত দেখতে পাচ্ছি। অতএব (সে মারা গেলে) এ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করবে। আর তোমরা দ্রুত কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে। কেননা কোনো মুসলমানের মৃতদেহকে পরিবারস্থ লোকদের মাঝে আটকে রাখা উচিত নয়। সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৩১৫৯
ফকীহগণ মৃতের গোসল, কাফন-দাফন ও জানাযা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ দ্রুত সম্পন্ন করাকে উত্তম বলেছেন এবং বিনা ওজরে বিলম্ব করাকে মাকরূহ বলেছেন।
প্রধানত ইসলামে লাশের পোস্টমর্টেম নীতিগতভাবে জায়েজ নয়। ইসলামের বিধানমত মৃতের দেহে আঘাত বা কাটাছেড়া বৈধ নয়। সে হিসাবে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কারো লাশ কাটাছেঁড়া বা পোস্টমর্টেম করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও হারাম। তবে বিশেষ প্রয়োজন যেমন মামলা-মোকদ্দমার ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম করার অবকাশ রয়েছে। বর্তমানে হত্যার কারণ ও হত্যাকারী জানা সত্ত্বেও পুলিশ পোস্টমর্টেমের নির্দেশ দেয়। ইসলামী শরিয়ত এর অনুমিত দেয় না। -ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/৭৪১, জামেউল ফাতাওয়া, আবু দাউদ শরীফ ২/৪৫৮, নির্বাচিত ফাতাওয়ায়ে মাদানিয়া’র ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ২৫৮
Leave a Reply