সাধারণত কোন বিষয়ে কসম করাই ঠিক নয়, কারণ অনেক সময় কসম করে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না ফলে সেই কসম করার দরুন গোনাহ হয়। আবার এর কারণে কসমের কাফফারাও দিতে হয়। ইসলামে সব বিষয়ের একটি নিয়ম রয়েছে। কসমও এর ব্যতিক্রম নয়; কসমে রয়েছে শরয়ী নিয়ম।
কসম কেবল আল্লাহ তাআলার নামে করা। অথচ মুসলিম সমাজের অনেকের মুখে শিরকি ও কুফরি কসমও শোনা যায়। যেমন- পশ্চিম (কাবার) দিকে মুখ করে কসম, মসজিদে গিয়ে বা স্পর্শ করে কসম, ছেলে-মেয়ের নামে বা স্পর্শ করে কসম, মা-বাবাসহ অন্যান্য গাইরুল্লাহর নামে কসম। অথচ কসম করার ইসলামি রীতি আমাদের জানা থাকা দরকার। সহজের জন্য কিছু নীতি তুলে ধরা হলো-
আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি জগতের কসম করতে পারেন। যা কুরআনের বহু জায়গায় অনেকবার উল্লিখিত হয়েছে। কিন্তু জ্বিন-ইনসান তথা গাইরুল্লাহর নামে কসম করা কুফরি তথা শিরকে আসগার বা ছোট শিরক। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে-হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর (আল্লাহ ব্যতিত অন্যের) নামে হলফ বা কসম করলো সে কুফরি বা শিরক করলো।-তিরমিজি, মুসতাদরেকে হাকিম
সুতরাং কোনো কারণে যদি কসম করতেই হয় তবে শুধুমাত্র আল্লাহর নামেই কসম করা। আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে কসম করা কুফরি বা শিরক। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গাইরুল্লাহর নামে কসম করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
তেমনিভাবে কুরআন শরীফের কসম করে কোনো কাজের প্রতিজ্ঞা করলে কসম সংঘটিত হয়ে যায়। তাই কুরআনের কসম করে তা পূরণ করা ওয়াজিব। আর ভঙ্গ করলে কাফ্ফারা ওয়াজিব।
কসমের কাফফারা হল, দশজন গরিবকে দুই বেলা তৃপ্তিসহ খাবার খাওয়ানো অথবা তাদেরকে বস্ত্র দান করা। যদি এমন আর্থিক সামর্থ্য না থাকে তাহলে ধারাবাহিকভাবে তিন দিন রোযা রাখবে।
لَا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا عَقَّدتُّمُ الْأَيْمَانَ ۖ فَكَفَّارَتُهُ إِطْعَامُ عَشَرَةِ مَسَاكِينَ مِنْ أَوْسَطِ مَا تُطْعِمُونَ أَهْلِيكُمْ أَوْ كِسْوَتُهُمْ أَوْ تَحْرِيرُ رَقَبَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ ۚ ذَٰلِكَ كَفَّارَةُ أَيْمَانِكُمْ إِذَا حَلَفْتُمْ ۚ وَاحْفَظُوا أَيْمَانَكُمْ ۚ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ [٥:٨٩
আল্লাহ তোমাদেরকে পাকড়াও করেন না তোমাদের অনর্থক শপথের জন্যে; কিন্তু পাকড়াও করেন ঐ শপথের জন্যে যা তোমরা মজবুত করে বাধ। অতএব, এর কাফফরা এই যে, দশজন দরিদ্রকে খাদ্য প্রদান করবে; মধ্যম শ্রেনীর খাদ্য যা তোমরা স্বীয় পরিবারকে দিয়ে থাক। অথবা,তাদেরকে বস্তু প্রদান করবে অথবা,একজন ক্রীতদাস কিংবা দাসী মুক্ত করে দিবে। যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে না,সে তিন দিন রোযা রাখবে। এটা কাফফরা তোমাদের শপথের,যখন শপথ করবে। তোমরা স্বীয় শপথসমূহ রক্ষা কর এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য স্বীয় নির্দেশ বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। -সূরা মায়িদা-৮৯
আরও জেনে রাখা ভালো, কোনো বৈধ কাজ করবে না বলে কসম করার পর যদি ঐ কাজটি করাই কল্যাণকর সাব্যস্ত হয় তাহলে ঐ কাজটি করে কসমের কাফফারা দিয়ে দেওয়াই উত্তম। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ، فَرَأَى غَيْرَهَا خَيْرًا مِنْهَا، فَلْيَأْتِهَا، وَلْيُكَفِّرْ عَنْ يَمِينِهِ.
কেউ যদি কোনো বিষয়ে কসম করে অতঃপর এর বিপরীত করার মাঝে কল্যাণ দেখতে পায় তাহলে সে যেন ঐ কল্যাণকর কাজটিই করে এবং কসমের কাফফারা দিয়ে দেয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬৫০
আরও উল্লেখ্য যে, কুরআন শরীফের কসম করার দ্বারা যদিও কসম সংঘটিত হয়ে যায় তথাপি কুরআন শরীফের কসম করা জায়েজ নেই। কসম কেবলমাত্র আল্লাহর নামেই করা যায়। তাই ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া কর্তব্য।
-রামযুল হাকায়েক ১/২০৫; ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; আলবাহরুর রায়েক ৪/২৮৬; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১২